14 Nov 2024, 06:25 pm

ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করতে ইরানি সমাজের কাছে নেতানিয়াহুর পরোক্ষভাবে অনুরোধ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইসরাইলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যিনি গত এক বছর ধরে গাজা ও লেবাননে হামলা চালিয়ে হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছেন তিনি ইরানি সমাজের কাছে বার্তায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য তাদেরকে পরোক্ষভাবে অনুরোধ জানিছেন।

নেতানিয়াহুর সম্প্রতি প্রকাশিত একটি ভিডিও বার্তায় পশ্চিমা মদদপুষ্ট দুই বছরের আগের একটি প্রকল্প ‘নারী, জীবন,স্বাধীনতা’র স্লোগানটিকে তিনি ইরানি জাতির কাছে উপস্থাপন করেছেন। এই বার্তায় নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি আশা করেন যে  “নারী, জীবন, স্বাধীনতা! স্লোাগানটি পশ্চিমা ঘেষা ইরানি লোকদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবে এবং সেই সঙ্গে তিনি পরোক্ষভাবে ইরানের জনগণকে তাদের পথ পরিবর্তন করার আহ্বান জানান।

ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য পশ্চিমা এবং ইহুদিবাদীদের নানা প্রচেষ্টা : আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্সসহ কিছু পশ্চিমা দেশ এবং সেই সঙ্গে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানে চাপ প্রয়োগ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে সমন্বিত চেষ্টা চালিয়েছে। অর্থনৈতিক ইস্যুতে ফোকাস করে এই দেশগুলো এমনভাবে পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করেছে যাতে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য উপযুক্ত প্লাটফর্ম তৈরি করা যায়।

মাথায় হিজাব না থাকায় ২০২২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী তেহরানে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন মাহসা আমিনি নামের ২২ বছরের এক তরুণী। গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চারদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় মাশার। মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ স্লোগান তুলে ইরান জুড়ে তাণ্ডব চালায় ইসলামি সরকার ও বিপ্লব বিরোধী একদল গোষ্ঠী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অস্থিরতার সুযোগ নিচ্ছে বলেও সেই সময় তেহরান অভিযোগ করেছিল।

যাইহোক পুলিশ হেফাজতে কুর্দি জাতিগত গোষ্ঠী এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের একজন ইরানি মেয়ে মাহসা আমিনির মৃত্য উল্লেখিত দেশগুলোর মিডিয়া এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জন্য ইরানে অস্থিরতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার একটি সুযোগ হয়ে ওঠে। ব্যাপক প্রচারণা এবং পশ্চিমা মদদপুষ্ট মিডিয়া এবং ইহুদিবাদী ইসরাইলের নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বিক্ষোভ দ্রুত শেষ হয় এবং ইরান জুড়ে বিশৃঙ্খলা এবং অস্থিরতার বিরুদ্ধে ইরানি জনগণের বিশাল উপস্থিতি এই দাঙ্গার সুযোগকে বানচাল করতে সক্ষম হয়। লেবাননের আল-মায়াদিন নেটওয়ার্ক এ সম্পর্কে লিখেছেন: আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডা, বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আইসল্যান্ড, ইতালি এবং ইহুদিবাদী শাসক ইরানের দাঙ্গায় ভূমিকা রেখেছিল।

নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক ভিডিও বার্তার বিরুদ্ধে সামাজিক নেটওয়ার্কে প্রতিক্রিয়া ; “ইসরাইলের প্রকাশিত এজেন্ডা : ইরানের জনগণের কাছে নেতানিয়াহুর এই সাম্প্রতিক বার্তা ইরানিদের কাছে ব্যাপক উপহাসের বস্তুতে পরিণত হয়েছে এবং সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোতে তারা ব্যাপক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। প্ল্যাটফর্ম এক্স (সাবেক টুইটার)’র  ইরানি ব্যবহারকারীরা এই বার্তাটিকে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র এবং ইরানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হোসেন ইব্রাহিমি নামের একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘এই নোংরা খুনি, এই দুষ্ট রাক্ষস আজ রাতে নারী, জীবন এবং স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেছে। শয়তান তার দুষ্ট হাত সবার সামনে প্রমাণ হিসেবে হাজির করেছে। তিনি নেতানিয়াহুর বার্তাকে ইরানে অস্থিরতা সৃষ্টিতে ইহুদিবাদী শাসকদের ভূমিকার স্পষ্ট লক্ষণ বলে মনে করেন।

এক্স সোশ্যাল নেটওয়ার্কের আরেক ইরানী ব্যবহারকারী মোস্তফা গেরজিও ইহুদিবাদী শাসকের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের পরাজয়ের চিহ্ন এবং নেতানিয়াহুর মুখ থেকে মুখোশ অপসারণের চিহ্ন হিসাবে বিবেচনা করেছেন। ২০২২ সালে ইরানে দাঙ্গা নিয়ে তিনি লেখেন, ‘নেতানিয়াহু অবশেষে তার মুখোশ খুলে ফেললেন এবং নারী, জীবন ও স্বাধীনতা স্লোগান তুলে দাঙ্গা সৃষ্টিকারীদের পক্ষ নিয়েছেন। উত্তর ফ্রন্টে পরাজয় ও ধারাবাহিক ব্যর্থতার পর তিনি এখন জনপ্রিয় স্লোগানের আশ্রয় নিয়েছেন। এখন থেকে হিজাব নিয়ে যাই ঘটুক না কেন তার জন্য ইসরাইল দায়ী থাকবে।

ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর বিদেশ নীতিতে নারী, জীবন এবং স্বাধীনতাপ্রকল্পের ভূমিকা  : নেতানিয়াহুর বার্তার প্রতি ইরানি ব্যবহারকারী এবং বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া বেশিরভাগই এই বিষয়টির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল যে  ইহুদিবাদী সরকার এবং কিছু পশ্চিমা সরকার, দাঙ্গা-ভিত্তিক আন্দোলন “নারী, জীবন, স্বাধীনতা” এর স্লোগান তুলে ধরে এই সামাজিক দাবিগুলোকে অপব্যবহার করার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে ইরানে তাদের হীন রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা লক্ষ্যগুলোকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য পশ্চিম এশিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে জেড প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে এই স্লোগানকে তারা হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে।

 

 

 

 

 

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 1921
  • Total Visits: 1242850
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ বৃহস্পতিবার, ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ১২ই জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সন্ধ্যা ৬:২৫

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
11121314151617
18192021222324
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018